অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

চট্টগ্রাম কাস্টমসে জনবল সংকট: দুর্ভোগে আমদানি রপ্তানিকারকরা

0
CUSTOMS_HOUSE
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে আশানুরূপ সেবা পাচ্ছে না আমদানি রপ্তানিকারকরা। জনবল সংকটের ফলে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১ হাজার ৮২১ কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে ।

মোট পদের মাত্র ৪৫ শতাংশ জনবল নিয়ে চলছে দেশের রাজস্ব আহরণের সবচেয়ে বড় এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম।

পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় নিয়মিত কাজের পাশাপাশি খালাসোত্তর নিরীক্ষা (পিসিএ), বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) ও নিলাম প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।

এ ছাড়া লোকবল সংকটের কারণে নির্ধারিত সময়ে আমদানি পণ্য ছাড়করণ ও রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণ করতে পারছেন না আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকরা।

কাস্টমস সুত্র জানায়,চট্টগ্রাম কাস্টমসে ১ হাজার ২৪৮ পদের বিপরীতে মাত্র ৫৬৭ জন কর্মরত আছেন। অর্থাৎ মোট পদের মাত্র ৪৫ শতাংশ জনবল নিয়ে চলছে দেশের রাজস্ব আহরণের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান। এতে দেশের আমদানি-রপ্তানিকারকরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

কাস্টমসের সংস্থাপন শাখার তথ্য অনুযায়ী, এখানে অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১ হাজার ২৪৮টি। এর বিপরীতে মাত্র ৫৬৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম কাস্টমসের ৬৮১টি পদ শূন্য রয়েছে।

সহকারী পরিচালক (পরিসংখ্যান), প্রোগ্রামার ও প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পদের ৬টি পদই শূন্য। ডেপুটি কমিশনারের ১৬টি পদের মধ্য শূন্য রয়েছে ১৩টি। ৪৮৭টি অ্যাসিস্ট্যান্ট রেভিনিউ অফিসার পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ১৭২ জন।

Chittagong_Customs_House_05
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ।

একইভাবে ৫টি যুগ্ম কমিশনার পদের বিপরীতে মাত্র ৩ জন কর্মরত। এছাড়া ১১৯টি রাজস্ব কর্মকর্তা পদের বিপরীতে ৭৬ জন, ৪৭টি সহকারী কমিশনার পদের বিপরীতে ৩৪ জন, ৪২৩টি তৃতীয় শ্রেণির স্টাফ পদের বিপরীতে ১৮১ জন এবং ১৪১টি চতুর্থ ও অন্যান্য পদে বিপরীতে ৯৪ জন কর্মরত আছেন।

তবে জনবল সংকট সত্বেও সদ্য সমাপ্ত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩১ হাজার ২৯৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ, যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরের তুলনায় ৪ হাজার ৫৫ কোটি টাকা বেশি।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রায় ২৭ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছিল চট্টগ্রাম কাস্টমস। কাস্টমসের ২০১৫-১৬ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়-সংক্রান্ত পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

সম্প্রতি কাস্টমসের পক্ষ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পাঠানো এক চিঠিতে শূন্যপদের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। ওই চিঠিতে শূন্যপদের বিপরীতে ২০ জন সহকারী ও ডেপুটি কমিশনার এবং ৭৫ জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদায়নের অনুরোধ করা হয়েছে।

এনবিআরে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৬৩টি ডেপুটি কমিশনার ও সহকারী কমিশনার পদের বিপরীতে চট্টগ্রাম কাস্টমসে ৪৬ জন কর্মরত ছিলেন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরেও এ পদে ৩৬ জন ছিলেন। ২০১৫-১৬ বছরে তা আরও কমে ৩১ জনে দাঁড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত এ পদে ৩১ জন কর্মরত আছেন, যা মঞ্জুরীকৃত পদের তুলনায় ৫১ শতাংশ কম।

চিঠিতে আরও জানানো হয়েছে, ৪৮৭টি অ্যাসিস্ট্যান্ট রেভিনিউ অফিসার পদের বিপরীতে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১৮৯ জন কর্মরত ছিলেন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তা বাড়িয়ে ২০৩ জন করা হলেও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কমে ১৬৯ জনে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে অ্যাসিস্ট্যান্ট রেভিনিউ অফিসার পদের ১৬৮ জন কর্মরত আছেন, যা মঞ্জুরীকৃত পদের তুলনায় ৬৫ শতাংশ কম।

image_24_4588
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ।

গত ১২ মে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ থেকে পাঁচজন সহকারী কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারকে অন্য কমিশনারেটে বদলি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ওসব পদ শূন্য আছে। এছাড়া গত ১৭ জুলাই তিনজন সহকারী কমিশনার ৬ মাস মেয়াদী পি.এ.টি.সি প্রশিক্ষণের জন্য এবং একজন ডেপুটি কমিশনার মাস্টার্স কোর্সে অংশগ্রহণের জন্য চলতি মাসে বিদেশ গেছেন। ফলে মাত্র ২৫ জন অর্থাৎ মঞ্জুরীকৃত পদের মাত্র ৪০ শতাংশ ডেপুটি কমিশনার এবং ৩৫ শতাংশ অ্যাসিস্ট্যান্ট রেভিনিউ অফিসার দিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের দৈনন্দিন কাজ পরিচালিত হচ্ছে। এতে রাজস্ব আদায়ে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন কাস্টমস সংশ্লিষ্টরা।

কাস্টমসের কমিশনার হোসেন আহমেদ পাঠক ডট নিউজকে বলেন, অনেকদিন ধরে জনবল সংকট অবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। বর্তমানে মোট পদের প্রায় ৪৫ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে কাস্টমসের কাজ করা হচ্ছে। জনবল সংকট সত্বেও ২০১৪-১৫ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪ হাজার ৫৫ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি বলেন, সীমিত জনবল নিয়েও সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হয়েছি আমরা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১ হাজার ৮২১ কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। জনবল সংকট না থাকলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় সম্ভব হতো।

কাস্টমসের এই কমিশনার আরও বলেন, সীমাবদ্ধতা সত্বেও রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছি। পর্যাপ্ত লোকবল থাকলে নিয়মিত কাজের পাশাপাশি খালাসোত্তর নিরীক্ষা (পিসিএ), বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) ও নিলাম প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া সম্ভব হতো। এতে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা ছিল।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের চট্টগ্রাম কাস্টমস-বিষয়ক সম্পাদক ওবায়দুল হক আলমগীরপাঠক ডট নিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসের লোকবল সংকটের কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য ছাড় করা সম্ভব হয় না। সংকট নিরসনে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ, এনবিআর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ জানানো হলেও কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।