অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

“সংকট কাটিয়ে আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছি” বিজিএমইএ

0
.

চট্টগ্রামে বিদেশী বিনিয়োগ আর্কষণ সহ অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পোষাক শিল্প সংশ্লিষ্ট বিরজমান সমস্যা ও সমাধানের প্রস্তবনা শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দ বলেছেন-মহামারি করোনার ধাক্কা কাটিয়ে তৈরী পোশাক শিল্প ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। তবে এ জন্য সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রয়োজন। বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট সেবাকে অত্যাবশ্যকীয় ও জরুরি সেবা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, বন্দর কাস্টমস পরিবহন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের ধর্মঘটের মাধ্যমে আমদানি রফতানি কার্যক্রম ব্যাহত করার অপচেষ্টা বন্ধ করা প্রয়োজন।

আজ শনিবার দুপুরে খুলশীর বিজিএমইএ ভবনের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের ব্রান্ডিং ছাড়া পোশাক শিল্পকে টিকিয়ে রাখা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে। শ্রমঘন শিল্প হওয়ায় আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছি। বিদেশ থেকে প্রচুর অর্ডার পাচ্ছি। এ খাতে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এর পুটো কাজে লাগাতে হবে।

চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর ও আনোয়ারা ইকোনমিক জোনে পোশাক শিল্পের কারখানা স্থাপনে স্বল্পমূল্যে ভূমি বরাদ্দ, সহজ ও স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ দেওয়া, চট্টগ্রামে কিছু ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় স্থাপন, চট্টগ্রামস্থ আমদানি রফতানি নিয়ন্ত্রকের দফতর, বস্ত্র অধিদফতর, ইপিবি, বিনিয়োগ বোর্ড, জয়েন্ট স্টক কোম্পানিকে সমস্যা সমাধানে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ক্ষমতায়ন, শাহ আমানত বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক কানেকটিভিটি বৃদ্ধির আহবান জানান তিনি।

এসময় উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি নাসিরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, মঈনুদ্দিন আহমেদ মিন্টু, সাহাবুদ্দিন আহমেদ, এসএম আবু তৈয়ব, সহ-সভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী, পরিচালক এমএ সালাম, এম আহসানুল হক, এএম শফিউল করিম খোকন, তানভীর হাবিব, মেরাজ ই মোস্তফা কায়সার, মো. হাসান জেকি প্রমুখ।

সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট তৈরী পোষাক রপ্তানির প্রায় ৪০ শতাংশই হতো চট্টগ্রম থেকে। তারপর থেকে চট্টগ্রামের অংশ অবনমন ঘটতে থাকে। বর্তমান বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস জনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে তৈরী পোষাক শিল্পে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক কারখানা। ক্রেতারা অর্ডার বাতিল/ স্থগিত হয়েছে চট্টগ্রাম পোষাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রায় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তনী আদেশ বাতিল/ স্থগিত হয়ে গেছে।

বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ৪ হাজার ৭০০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২ হাজার ৭৩৪টি বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি ১ হাজার ৯৬৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১ হাজার ৬০০টি আমদানি-রফতানি কাজে নিয়োজিত আছে। চট্টগ্রামে ৬৭৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বন্ধ ৩৯৮টি, আমদানি রফতানি কাজে নিয়োজিত আছে ১৯০টি। করোনা পরিস্থিতিতে গত মার্চ থেকে আগস্টের মধ্যে ঢাকায় ২৮১টি ও চট্টগ্রামে ৩০টি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এক দশক আগেও তৈরি পোশাক রফতানিতে চট্টগ্রামের ৪৯ শতাংশ অংশগ্রহণ থাকলেও গ্যাস, বিদ্যুৎ সংকট অবকাঠামোগত বিভিন্ন সমস্যার কারণে ১৪ শতাংশে নেমে এসেছে।

এ সব সমস্যা সমাধান এবং উদ্ভত পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে বিজিএমইএ কর্মকর্তারা বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

সেগুলো হল- চট্টগ্রাম শহরের বাহিরে মিরশ্বরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল ও আনোয়ারায় ইকোনোমিক জোন এর মধ্যে পোশাক শিল্প এবং পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট কারখানা স্থাপনে স্বল্প মূল্যে ভূমি বরাদ্দ এবং অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

চট্টগ্রামে নতুন কারখানা স্থাপনসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে নতুন বিনিয়োগে সহজ ও স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানে ব্যাংক গুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। কয়েকটি সরকারী ও বেসরকারী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় চট্টগ্রামে স্থাপন। ঋণ প্রদান, বিনিয়োগ ইত্যাদির বিষয়ে চট্টগ্রামস্থ ব্যাংকের কার্যালয়সমূহকে ক্ষমতায়ন করা প্রয়োজন।

চট্টগ্রামস্থ সরকারী অধিদপ্তর সমূহ যেমন আমদানী রপ্তানী নিয়ন্ত্রকের দপ্তর, বস্ত্র অধিদপ্তর, ইপিবি, বিনিয়োগ বোর্ড, জয়েন্ট ষ্টক কোম্পানী এবং সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর সমূহকে এতদঅঞ্চলের শিল্প কারখানা সংশ্লিষ্ট সমস্যা সমাধানে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ক্ষমতায়ন করা প্রয়োজন।

পোশাক শিল্পের প্রনোদনা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম কার্যালয়কে ক্ষমতায়ন করা প্রয়োজন।

চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমান বন্দরের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধিপূর্বক আন্তর্জাতিকরণ এবং বিমানের আন্তর্জাতিক কানেক্টিভিটি বৃদ্ধি করা।

বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এছাড়াও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা, কর্ণফুলী গ্যাস সিষ্টেম, পিডিবিসহ ইউটিলিটি দপ্তর সমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধনপূর্বক নিরবচ্ছিন্নভাবে ব্যবসা পরিচালনার সুযোগসুবিধা নিশ্চিতকরণ।

বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট সেবাকে “অত্যাবশ্যকীয় সেবা/জরুরী সেবা” হিসাবে অর্ন্তভূক্ত করা। বন্দর কাস্টমস্ পরিবহন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন কর্তৃক ধর্মঘটের মাধ্যমে আমদানী-রপ্তানী কার্যক্রম ব্যাহত করার অপচেষ্টা বন্ধ করা প্রয়োজন।