অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

ম্যাক্স হাসপাতাল যেন এক মৃত্যুপুরি

2
.

চট্টগ্রাম ম্যাক্স হাসপাতাল যেন এক মৃত্যুপুরি। চিকিৎসা অবহেলা আর অপচিকিৎসায় রোগির মৃত্যু, জীবিত নবজাতককে মৃত ঘোষণা করা এ হাসপাতালের নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ এখন আর নতুন কিছু নয়।  শিশু রাইফার মৃত্যু পর এক এক করে বেরিয়ে আসছে হাসপাতালটির অপকর্মের এসব তথ্য ।

গত মে মাসেও ম্যাক্সে অপ চিকিৎসায় অকালে মৃত্যু হয়েছে লালন সংগীত শিল্পী মৌনতার। এক মাসের মাথায় একই ভাবে মৃত্যু হল রাইফা’র। এর আগে নবজাতকসহ আরো বেশ কয়েকটি রোগির মৃত্যু হয় অপচিকিৎসার কারণে। এ ছাড়াও ঘটেছে জীবিত নবজাতককে মৃত ঘোষনার ঘটনা।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার দীপক দত্তের মাকে ভুল চিকিৎসা দিয়ে হত্যার অভিযোগ করেন তিনি।  ২০১৬ সালের ৪ জানুয়ারী ম্যাক্স হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।

সিভিল ইঞ্জিনিয়ার দীপক দত্ত বলেন, ম্যাক্স হাসপাতালে অনেকই অকাল মৃত্যু হয়েছে, তার ভিতরে আমার পরম পূজনীয় প্রিয় “মা”। গত ০২/০১/২০১৬ইং, উন্নত চিকিৎসার জন্য চবক হাসপাতাল থেকে রাত ১.৩৫টায় ম্যাক্স হাসপাতালে আনার পর ইন্টার্নি ডাক্তার দেখে ০৩ তলায় পাঠালে লিফ্ট নষ্ট থাকায় “মা”হেঁটে উঠার পর নার্স ICU তে ঢুকাছিলেন,তখন মা বললেন কেবিনে নেওয়ার জন্য কিন্ত তারা অনেকটা জোর করে ICU তে ঢুকিয়ে বেডের পাইপের সাথে দুই হাত বেধে স্যালাইন পুশ করছিল, মা ও আমি কেন হাত বাঁধলো জিজ্ঞেসায় উত্তর দিল এইটা নিয়ম, আমরা বার বার কেবিনে নেয়ার জন্য বলার পরও তারা আমাদের কোন কথা শুনলো না,ভাল ও সিনিয়র ডাক্তার দেখাবার কথা বললেও সকালে বিকালে বলতে বলতে পরের দিন বিকাল ৩.৪৫মিঃ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এর এক জন ডাক্তার এসে মার লান্স থেকে জল বাহির করে,এর পর আমাদের জোর Request এ আরও ৪/৫ জন ডাক্তার এসে মা কে দেখেন এবং তারাও Advice করেন কেবিনে দেওয়ার জন্য কিন্ত ম্যাক্স কর্তৃপক্ষ আমাদের কোন কথাই শুনলেন না। “মা” কে বার বার নার্স ঘুমের ঔষধ দিয়ে দূর্বল করে ফেলে, মার ঘুম ভাংলেই আমাকে ও আমার বড় মেয়ে মনীষার নাম ধরে চিৎকার করে বলতে থাকে ICU থেকে নিয়ে যাওয়া জন্য কিন্ত সেই ঘুমে আমার শক্তিধর “মা”কে পরপারে পাঠিয়ে দিয়ে আড়াই দিনের ৩,২০,০০০/টাকার বিল ধরিয়ে দেয়।

একের পর এক রোগি মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও এ নিয়ে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি এখনো পর্যন্ত। দু এক জন রোগির অভিভাবক এসব ঘটনা নিয়ে হৈ চৈ করলেও ম্যাক্স কর্তৃপক্ষের প্রভাব আর দাপটের কাছে অসহায় বেশীর ভাগ রোগির অভিভাবকরা। নিজের আপনজন হারিয়ে দু একজন অভিভাবক যারা প্রতিবাদ করেছেন তারাও আবার নাজেহাল হয়েছেন চট্টগ্রামের বিএমএ নেতাদের হাতে।

অভিযোগ রয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের লাইসেন্স বা ছাড়পত্র নেই বেসরকারী হাসপাতালটির। শুধুমাত্র সিটি কর্পোরেশনের একটি ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে চলছে এর কার্যক্রম। খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসাইন’ই এ তথ্য প্রকাশ করেছেন। বিষোধগার করেছেন কথিত বিএমএ নেতারও যিনি এ হাসপাতালের পক্ষে বিতর্কিত ভূমিকা রেখেছেন। গত রোববার রাতে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সাংবাদিক নেতাদেও সাথে বৈঠকে তিনি এসব তথ্য প্রকাশ করেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বা লাইসেন্স ছাড়া শুধুমাত্র সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে কিভাবে চলছে এতবড় একটি হাসপাতাল এ প্রশ্ন এখন চট্টগ্রামের সচেতন মহলের মুখে মুখে।

এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে জানা গেছে ম্যাক্স হাসপাতালে সংগীত শিল্পী মৌনতা এবং শিশু রাইফার মৃত্যুর ধরন অনেকটা একই কায়দায়। একটি ইনজেকশানই মৌনতাকে নিয়ে যায় মৃত্যুর দিকে। ৩০ এপ্রিল মৌনতাকে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ভর্তির পর জ্বর কমাতে দেয়া হয় একটি ইনজেকশান। এর পর আবার ডোসও দেয়া হয়।

চিকিৎসা আইন এবং হাসপাতালের নিয়ম মতে রোগিকে যে সব ঔষধ দেয়া হবে তা সময় এবং তারিখ মতে রোগির চিকিৎসা ফাইলে লিপিবদ্ধ করতে হবে। কিন্তু মৌনতার জ্বর কমানোর জন্য যে ইনজেকশান প্রয়োগ করা হয় তা তার চিকিৎসা ফাইলে উল্লেখ করা হয়নি। এ ছাড়া জ্বর কমাতে ইনজেকশানের পাশাপাশি ডোস দেয়াটাও কতটুকু যুক্তিযুক্ত তাও প্রশ্নবিদ্ধ। একই ঘটনা ঘটেছে শিশু রাইফার ক্ষেত্রে। তাকেও ব্যাথা কমানোর জন্য স্যালাইনের সাথে ইনজেকশান এবং ডোস দেয়া হয়। যার কারণে দ্রুত রাইফার অবস্থার অবনতি ঘটে এবং মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে শিশু রাইফা।

রাইফার বাবা সাংবাদিক রুবেল খান এবং ঐ হাসপাতালের নার্স এর আপত্তির পরেও শিশু রাইফাকে একই ঔষধ বার বার দেয়া হয় ।

সংগীত শিল্পী মৌনতার মা বনশ্রী সরকার বলেন, ৩০ এপ্রিল গায়ে জ¦র অনুভব করায় ম্যাক্সে ভর্তি করা হয় নবনি সরকার মৌনতা (১৪ কে। ভর্তির পর পরই ম্যাক্স কর্তৃপক্ষ তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করেন। মৌনতার কি রোগ হয়েছে তা সঠিকভাবে তার অভিভাবককে বলেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
তিনি বলেন, অনেক গুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা আর এক্সরে করানোর পর তারা কখনো বলেন, মৌনতার কিডনি নষ্ট, কখনো বলেন ম্যালেরিয়া,কখনো টাইপয়েড,আবার কখনো বলেছেন ল্যান্সে পানি জমেছে।

ইকো এবং এক্সরে রিপোর্ট স্বাভাবিক থাকার পরেও ম্যাক্স কর্তৃপক্ষ বলেন মৌনতাকে ৪০ ব্যাগ রক্ত দিতে হবে। এভাবে তিনদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও অবস্থার উন্নতি না হয়ে ক্রমশ অবনতি হতে থাকে।

এতে করে ম্যাক্সের চিকিৎসা নিয়ে মৌনতার অভিভাবকদের সন্দেহ হলে তারা মৌনতাকে রিলিজ করে নিয়ে যান। কিন্তু ততক্ষনে সোয়া এক লাখ টাকার বিল হাতিয়ে নিয়েছে মৌনতার পরিবারের কাছ থেকে।

মৌনতার খালা জয়শ্রী সরকার বলেন,১ জুন ম্যাক্স থেকে রিলিজ নিয়ে ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় মৌনতাকে। সেখানে গিয়েই জানতে পারেন যে ম্যাক্সে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা হয়েছে মৌনতার।

এ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৌনতার অভিভাবককে জানান, কোন কিডনি নষ্ট হয়নি। ৪০ ব্যাগ রক্তও লাগবেনা। ভূল চিকিৎসার কারণে মৌনতার শারিরীক অবনতি হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত বাঁচানো সম্ভব হয়নি মেধাবী এ শিক্ষার্থী মৌনতাকে।

এদিকে রাজনৈতিক এবং আর্থিক প্রভাব খাটিয়ে ম্যাক্স হাসাপাতাল গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ আছে। আর হাসপাতালটির শুরু থেকে এ পর্যন্ত বেশকিছু বিতর্কিত ঘটনা আছে।

জীবিত নবজাতককে মৃত ঘোষণা, ভুল চিকিৎসায় শিশু মৃত্যুসহ বেশকিছু অভিযোগ উঠেছে। আবার এরকম অনেক অভিযোগ প্রকাশ্যেও আসেনা। কিছুদিন আগে এক নারী অভিযোগ করলেন- তার গর্ভের পাঁচমাস বয়সী নবজাতক ভুল চিকিৎসায় মারা গেছে। তিনি একটি সংবাদ প্রকাশের জন্য আমার কাছে আসলেন। ঘটনা বলতে গিয়ে তিনি হু হু করে কেঁদে ফেললেন।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডাক্তার আজিজুর রহমান ছিদ্দিকী অনেকটা নিজেদের অসহায়ত্ব স্বীকার করে বলেন, ম্যাক্সের মত এসব হাসপাতাল দিনের পর দিন নানা অনিয়ম করলেও সিভিল সার্জন অফিসের কাছে এদের লাগাম টেনে ধরার কোন ব্যবস্থা নেই।

সিটি মেয়র আজম নাছির উদ্দিন বলেন,যারা নিজেদের চিকিৎসক পরিচয় দেয় আর রোগির সাথে চিকিৎসক মূলক আচরন করেননা তাদের মধ্যে মনুষত্ত্ব নেই। ম্যাক্সসহ হাসপাতাল গুলোর লাইসেন্স সঠিকভাবে যাতে গ্রহন করা হয় সে বিষয়টি মনিটরিং করার জন্য একটি সুপারিশ মালা সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে ম্যাক্স হাসপাতালে বার বার ফোন করা হলেও কর্তৃপক্ষ কারো সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।  পরে হাসপাতালের টিএনটি নাম্বারে ফোন করলে রিসিভশন থেকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় রেখে ফোন কারো কাছে হস্তান্তর করে নি।।

২ মন্তব্য
  1. Pori Islam বলেছেন

    Saniya Akter

  2. Md Nur বলেছেন

    ম্যাক্স হাস্পাতাল বয়কট করব।