অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

নগরীতে দুই মাস ধরে পাশবিক নির্যাতনের শিকার এক তরুনী

0

চট্টগ্রামে দু মাস ধরে পাশবিক নির্যাতনের শিকার এক তরুনী (২২) চমেক হাসপাতালে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে।
পাশবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে এ তরুনী এখন অনেকটা স্মৃতি শক্তি হারিয়ে বাকরুদ্ধ।

গত দুমাস ধরে মানুষ রূপী একদল হায়েনার তার উপর চালিয়েছে অমানুষিক নির্যাতন। এ নরপশুরা ছাড়াও তাকে দিয়ে করিয়েছে দুমাস ধরে দেহ ব্যবসা। কখনো দেহ ব্যবসায় রাজি না হলে তার উপর চালিয়েছে শারীরিক নির্যাতন।

দুমাস একটানা পাশবিক ও শারীরিক নির্যাতনের পর অনেক মৃত অবস্থায়য় তাকে বায়েজিদ থানার অদুরে মোহাম্মদ নগর কাঁচা বাজারের সামনে ফেলে চলে যায় এসব হায়েনার দল।

গত ১৯ জুন তাকে আদমরা অবস্থায় উদ্ধার করে বায়েজিদ থানার টহল পুলিশ। ২২ বছর বয়সী হতভাগা এ তরুনী পারুল (ছদ্ম নাম) পেশায় একজন পোশাক শ্রমিক। গত দু বছর ধরে বায়েজিদ এলাকায় মায়ের সাথে থেকে একই পোশাক কারখানায় চাকরী করতেন।

স্বামী পরিত্যাক্তা এ তরুনীর মা মাজেদা জানান গত দু বছর আগে হঠাৎ করে বাসা ছেড়ে চলে যায় পারুল। মাঝে মধ্যে বাসায় আসা যাওয়া করত।

.

গত তিন মাস আগে ইসমাইল নামে এক ছেলের সাথে পারুলের বিয়ে হয়। পারুল জানান, গত দু মাস আগে স্বামী ইসমাইলের গ্রামের বাড়ী নোয়াখালী থেকে বাসে করে নগরীর জিইসি মোড়ে নামেন। মায়ের বাসায় যাওয়ার জন্য সে অপেক্ষা করতে থাকে। এসময় পুর্ব পরিচয়ের সুত্র ধরে আলম নামে এক লোক তাকে বাসায় পৌছে দেয়ার কথা বলে সিএনজি উঠায়।

এর পর পারুলকে অজ্ঞাত স্থানে জেরিনা নামের এক পতিতা সর্দারীনির বাসায়। সেখানে জেরিনা ও তার স্বামী বাবুল তাকে নিয়ে শুরু করে দেহ ব্যবসার। রাজি না হওয়ায় তাকে শারীরিক ভাবে বেদম মারধর করা হয়।

এ ভাবে চলে একটানা দু মাস। বাবুল, রফিক, আলম আর জেরিন মিলে তাকে নিয়ে মেতে উঠে নোংরা এ খেলায়।

অবশেষে গত সোমবার রাতে মরে গেছে ভেবে তাকে অনেকটা বিবস্ত্র অবস্থায় ফেলে যায় চক্রটি।

চমেক হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডের ওয়ার্ড সর্দার মো. বেলাল হোসেন বলেন,পারুলকে যখন হাসপাতালে আনা হয় তখন তাঁর অবস্থা ছিল আশংকাজনক। কথা বলা তো দুরে থাক তাঁর শরীরে একটি বোরকা ছাড়া আর কোন কাপড় ছিলনা। রক্তাক্ত দেহটি অনেকটা নিথর অবস্থায় ছিল। তিনি জানান,ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডের আয়া শিউলি, মিনুয়ারা ও রিপুর আন্তরিকতাপুর্ণ সেবায় ধীরে ধীরে কিছুটা স্বাভাবিক হতে থাকে পারুল। পারুলকে সুস্থ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে এ তিন আয়া।

বেলাল বলেন,বিভিন্ন বিভাগের ডাক্তারদের নিয়ে টিম করে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয় পারুলকে। ক্যাজুয়ালটিতে না রেখে অন্য ওয়ার্ডে রাখলে এত দিনে হয়তো মারা যেত পারুল। বর্তমানে তাঁকে মানসিক চিকিৎসা সেবাও দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। দু এক দিনের মধ্যে পারুলের ডাক্তারি পরীক্ষা করা হবে বলে হানান তিনি।

এদিকে পারুলের মা মাজেদা জানান,সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের বদৌলতে তার মেয়ের এ করুন পরিণতির খবর জানতে পেরে তিনি গত দু’দিন আগে তিনি হাসপাতালে এসে মেয়েকে দেখতে পান। তিনি জানান,তাঁর মেয়ের জীবন বিপন্ন করে দিয়েছে এ চক্রটি।

চমেক হাসপাতালে পারুলের সাথে কথা বলার সময় লক্ষ্য করা গেছে তাঁর শরীরের হাত,পায়ে,ঠোটে আঘাতের নানা ধরনের চিহ্ন।

পারুল অনেকটা ক্ষিন স্বরে বলেন, আলম, বাবুল, রফিক আর জেরিন মিলে তার জীবনকে ধংস করে দিয়েছে। গত দুমাসে বিভিন্ন কায়দায় সব ধরনের নির্য়াতনই করেছে তাকে। দেহ ব্যবসায় রাজি না হলে পানি পর্যন্ত দেয়া হয়নি তাঁকে।

এদিকে এ ঘটনার সাথে তার প্রেমিক স্বামী ইসমাইল জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখনো ইসমাইলের সঠিক কোন ঠিকানা পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া দীর্ঘ দু মাসেও নিজ স্ত্রী’র খবর না নেওয়ার বিষয়টিও ভাবিয়ে তুলছে পুলিশকে।

ইসমাইল নিজে স্ত্রী বানিয়ে ভোগ করার পর কৌশলে তাঁকে পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখবে পুলিশ।

এদিকে চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই জহির বলেন,মেয়েটিকে যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তখন তার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। এখনো সে পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। মানসিক আঘাতের কারনে এখনো এলোমেলো কথা বার্তা বলছে পারুল।

বিষয়টি বায়েজিদ থানার ওসি তদারকি করছেন বলে জানান তিনি।

বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতাউর রহমান খোন্দকার বলেন,গত ১৯ জুন মেয়েটিকে মুমুর্ষ অবস্থায় রাস্তায় পাওয়া যায়। পুলিশ তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করে। মেয়েটি এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। তাঁর কথা বার্তা অসংলগ্ন। এ ছাড়া মানসিক ভাবেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আর একটু সুস্থ হলে তার সাথে কথা বলে বিস্তারিত তথ্য জেনে তার পর আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এ ছাড়া তাঁর চিকিৎসার সর্বোচ্চ তদারকি তিনি নিজেই করছেন বলে জানান।