অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

লোহাগাড়ার সাবেক ওসি শাহজাহান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

0
ওসি শাহজাহান ও তার স্ত্রী-সন্তান।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ চট্টগ্রাম রিজিয়নের পরিদর্শক ও জেলার লোহাগাড়া ও সন্দ্বীপ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহজাহান (৫৪) ও তার স্ত্রী ফেরদৌসী আক্তারের বিরুদ্ধে সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আজ বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এ মামলাটি দায়ের করেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. আতিকুল আলম।

এর আগেও দুদক তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের উপ-পরিচালক মো. আতিকুল আলম বলেন, অসৎ উদ্দেশ্যে একে অপরের সহযোগিতায় অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে এক লাখ ৭১ হাজার ৭৩৬ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য প্রদান, এক কোটি ৪৮ লাখ চার হাজার ৪১৩ টাকার সম্পদ স্থানান্তর ও রূপান্তর করে ভোগ দখলে রাখার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

দুদক জানায়, ১৯৯০ সালে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন শাহজাহান। ২০১৭ সালে লোহাগাড়া থানার ওসি মো. শাহজানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের একটি অভিযোগের প্রাথমিক অনুসন্ধানকালে সত্যতা পাওয়া যায়। সম্পদবিবরণীতে তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ২ কোটি ৬৪ লাখ ২৭ হাজার ৭০০ টাকা। এর মধ্যে ঋণ হিসেবে দেখানো হয়েছে, ৮৬ লাখ ৬৩ হাজার ৩৮৭ টাকা। চাকরি যোগদানের পর থেকে তিনি আয় দেখিয়েছেন ৭৮ লাখ ৫২ হাজার ৯৭৬ টাকা। ব্যয় দেখিয়েছেন ২৬ লাখ টাকা ১২ হাজার ৪৭৩ টাকা। তার বিরুদ্ধে ১ কোটি ২৫ লাখ ২৩ হাজার ৮১০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক।

এছাড়া ২০১৯ সালের ১৪ মার্চ শাহজাহান ও তার স্ত্রী ফেরদৌসী আক্তারের বিরুদ্ধে পৃথক পৃথক সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারির নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এরপর ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল ফেরদৌস আক্তার দুর্নীতি দমন কমিশনে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছেন। যা যাচাইয়ের জন্য দুদক সম্বনিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়।

টিমের দাখিল করা প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, আসামি ফেরদৌসী আক্তারের দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ৩ কোটি ২১ লাখ ৮৬ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য দিয়েছেন। তবে তার স্বামীর কাছ থেকে দান হিসেবে প্রাপ্ত ৪৩ লাখ ১০ হাজার ৮৬৭ টাকার সম্পদ বাদ দিয়ে ঘোষিত স্থাবর সম্পদ মোট ২ কোটি ৭৮ লাখ ৭৫ হাজার ১৩৩ টাকা। এছাড়া দুদক যাচাইকালে তার নামে মোট ২ কোটি ৮০ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬৭ টাকার স্থাবর সম্পদ পেয়েছে।

এছাড়া তিনি তার দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে নিজ নামে মোট ৪২ লাখ ৬৪ হাজার ৯৩১ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। সম্পদ বিবরণী যাচাই কালে তার নামে ৪২ লাখ ৬৪ হাজার ৯৩১ টাকার অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়। অর্থাৎ, দান বাদে তিনি তার নামে সর্বমোট ৩ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার ৬৪ টাকা সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। যাচাই কালে তার নামে সর্বমোট ৩ কোটি ২৩ লাখ ১১ হাজার ৭৯৮ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়।

ফেরদৌস তার স্বামী ওসি মো. শাহজাহানের সহযোগিতায়, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে অর্জিত অপরাধ লব্ধ অর্থ স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তরপূর্বক ভোগ দখলে রাখার খারাপ উদ্দেশ্যে পোল্ট্রি ও মৎস্য ব্যবসার আয় দেখিয়ে ২ কোটি ২৯ লাখ ৩০ হাজার ৭৩৫ টাকা ভুয়া আয় প্রদর্শন করেছেন।

আরও জানা গেছে, ফেরদৌসী আক্তারের পারিবারিক ব্যয়, কর পরিশোধ ও অন্যান্য ব্যয় বাবদ মোট খরচ ৫৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮০৪ টাকা। এছাড়া তাদের যৌথনামে উত্তরা ব্যাংক লালখান বাজার শাখার বাড়ি নির্মাণের জন্য গ্রহণকরা ১২ লাখ টাকা ঋণের সুদ হিসেবে মোট ৭ লাখ ৩৪ হাজার ২৭০ টাকা পরিশোধ করেছেন। তার অংশের পরিমাণ ৩ লাখ ৬৭ হাজার ১৩৫ টাকা, যা তার খরচ হিসেবে গণ্য হবে। এছাড়া তিনি মাইক্রোবাস কেনার জন্য ঢাকা ব্যাংক সিডিএ এভিনিউ শাখা থেকে ৬ লাখ টাকা ঋণের সুদ হিসেবে মোট ২ লাখ ৯৯ হাজার ৭৯৫ টাকা পরিশোধ করেছেন। ওই ৩ খাতে তার সর্বমোট খরচ ৬১ লাখ ৬০ হাজার ৭৩৪ টাকা।