অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

“হাসপাতাল বেডেই মৃত্যুর পথযাত্রী প্রেমিকাকে বিয়ে করলেন প্রেমিক”

0
.

ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল মৃত্যুর পথ যাত্রী প্রেমিকাকে হাসপাতালের বেড়ে বসে বিয়ে করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন প্রেমিক যুবক মাহামুদুল হাসান। এ যেন সিনেমার কাহিনীকেও হার মানিয়েছে।

ফাহমিদা ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার পরও সবকিছু জেনে বুঝে এবং স্ত্রীর সকল চিকিৎসার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়ে বিয়ে করছেন মাহমুদুল হাসান। এ বিয়ের খবরে এলাকাবাসী ও নেটিজনদের মাঝে প্রশংসায় ভাসছেন।

প্রেম-ভালোবাসার বহু শ্বাশত কাহিনী ইতিহাসে অমর হয়ে আছে। তেমনি হাসপাতালের বেডে আরেক ভালোবাসর অমর উপাখ্যান রচনা করল হাসান ও ফাহমিদা।

প্রেমিক মাহমুদুল হাসানের আরও একটি পরিচয় হল তিনি চকরিয়া ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক। তার এই কাজে দলের নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বসিত।

ব্যাতিক্রমী এ বিয়ের আয়োজনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন কনে ফাহমিদার নানা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন সাকি। তিনি দুজনের বিয়ের ছবি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার পর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

সাইফুদ্দিন সাকি জানান, কক্সবাজারের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল হকের ছেলে মাহমুদুল হাসান নর্থ সাউথ থেকে এমবিএ আর চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ বাকলিয়াতে জন্ম নেয়া ফাহমিদা কামাল আইইউবি থেকে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করেছে। শিক্ষাজীবনে দুজনের পরিচয়। লাবণ্যময়ী স্মার্ট সুন্দরী তরুনী ফাহমিদাকে ভাল লাগতে শুরু করে হাসানের। এর পর আস্তে আস্তে দুজন প্রেমে জড়িয়ে পরে। ভালবাসার মায়াবী বন্ধনে হয়ে উঠে দুজন দুজনার। হাতে হাত ধরে স্বপ্নেবিভোর রঙিন ভুবনে উড়তে থাকে অচেনা হাজারো পথে। সুখ আনন্দ সবই যেন ভরপুর। বিয়ে সংসার কত না মধুর সুখ চোখের কোনায়। কিন্তু হঠাৎ এমন স্বপ্ন সুখের রঙিন উঠোনে ঘনকালো অন্ধকার। সপেদ আকাশ মেঘে ঢাকা বৈরী ঝড়ো হাওয়া সব তছনচ করে দিতে উদ্যত। ফাহমিদার স্বপ্নরাঙা মায়াবী শরীরে বাসা বাধে মরণঘাতী ক্যান্সার।

কঠিন এ মরণব্যাধি ধরা পরার পর সাথে সাথে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা এভারকেয়ার পরবর্তীতে ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হসপিটালে নেয়া হয়। সেখানে দীর্ঘ একবছর চিকিৎসার পর ডাক্তাররা জানিয়ে দেয়- ফাহমিদার চিকিৎসা আর সম্ভব নয়, ইঙ্গিত দেয় বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই। পাথর চাপা কষ্ট নিয়ে পরিবারের সদস্যরা ২৪ বছর বয়সী ফাহমিদাকে চট্টগ্রামে নিয়ে এসে মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করাই। সেখানে চলতে থাকে চিকিৎসা। কিন্তু ক্রমাগত ফাহমিদার শাররীক অবস্থায় অবনতি হতে থাকে।

প্রেয়সী ফাহমিদার অসহ্য কষ্ট ও বুকভাঙ্গা যন্ত্রণা প্রেমিক হাসানের সহ্য হয় না। ফাহমিদার কষ্ট হাসান ভাগ করে নিতে চায়। চোখের জল মুচে দিতে চায়, কপালে হাত রেখে বলতে চায় আমি আগের মত এখনো তোমার পাশে আছি। হাতে হাত রেখে বলতে চায় আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি। তুমিই আমার জীবন তুমিই আমার সব। মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পারাতে চায়। বুকে জড়িয়ে নিয়ে কষ্টগুলো নিজের করে নিতে চায়। কিন্তু তা কি করে সম্ভব! হাসান ফাহমিদার প্রেমিক হলেও সমাজের চোখে পরপুরুষ। মৃত্যুযন্ত্রণায় ফাহমিদা নিঃশেষ হতে চলেছে।

এবার হাসান কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। ফাহমিদাকে যদি মরতে হয়, তাহলে তার বুকে মাথা রেখেই মরতে হবে। নিজের পরিবারকে নিয়ে এসে প্রস্তাব দিল সে সহসা ফাহমিদাকে বিয়ে করতে চাই । মৃত্যু পথযাত্রী ফাহমিদাকে হাসানের বিয়ে করার প্রস্তাবে সবাই হতবিহ্বল। হাসানকে বুঝানোর সব ধরনেরচেষ্টা করা হয়। কিন্তু হাসান তার অনঢ় সিদ্ধান্তে অটল।

অবশেষে উভয় পরিবার সম্মত হয়। বিষয়টি জানানো হয় জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা ফাহমিদাকে। অবিশ্বাস্য প্রস্তাব শুনে অপলক তাকিয়ে থাকে প্রিয় হাসানের দিকে। ফাহমিদার চোখেমুখে ফুটে উঠে নির্মল স্বর্গীয় হাসি। আনন্দ অশ্রুতে দুজনের পৃথিবী দোল খেতে থাকে। বাতাসে নাচতে থাকে রঙিন প্রজাপতি।

অবশেষে বিয়ের প্রস্তুতি নেয়া হয়। গত ৯ মার্চ রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টার হাসপাতােল বেডে বউ সাজিয়ে ১ টাকা কাবিনে বিয়ের আয়োজন হয়।

কনে ফাহমিদাকে পরানো হয় লাল বেনারসি শাড়ি, গালায় সোনার হার। বর হাসান পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে। আকত অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। দুজন মিলে কেক কাটে, মালা বদল হয়। খেজুর মিষ্টি খাওয়ানো হয়।

ক্ষনিকের জন্য হলেও মরণঘাতী ক্যান্সারকে জয় করে ফাহমিদা হয়ে উঠে অন্য এক পৃথিবীর বাসিন্দা। সমস্ত স্বর্গীয় সুখ তাকে ঘিরে রাখে। হারিয়ে যাওয়া সোনালী দিনগুলো আবার যেন ফিরে পায়। আনন্দে আত্মহারা ফাহমিদার আরো বাঁচতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে হাসানের বুকে মাথা রেখে হাজার বছর বাঁচতে। হাসান আর ফাহমিদার এই অমর প্রেমকাব্যে প্রেমেই জয় হলো।