অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

আওয়ামী লীগ এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু -ওসির ফোনালাপ ফাঁস!

0
.

বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সঙ্গে বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিকুল ইসলামের একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে।

তাদের কথোপকথনের এই কল রেকর্ডটি বৃহস্পতিবার ফাঁস হয়৷ তবে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে ৩ মিনিট ৪১ সেকেন্ডের এই অডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

গত বছরের ২১ জুন বরগুনা সদর উপজেলার বুড়ির চর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ভায়রা সিদ্দিকুর রহমান। তিনি ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হুমায়ুন কবিরের কাছে হেরে যান।

ওই নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ভোট গ্রহণের আগ পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। উভয় পক্ষ থানায় অন্তত ১০টি মামলা করে। এর মধ্যে এমপির ভায়রা সিদ্দিকুর রহমানের লোকজন ছয়টি এবং বিজয়ী হুমায়ুন কবিরের লোকজন চারটি মামলা করেন। মামলায় উভয় পক্ষের অন্তত ১২২ জনকে আসামি করা হয়।

মূলত ওই মামলার বিষয়েই এমপি কথা বলেন ওসির সঙ্গে। এই কথোপকথনে এমপির ভাষায় প্রচ্ছন্নভাবে এক ধরনের চাপ প্রয়োগের ইঙ্গিত ছিল। এ ছাড়া সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জেলা যুবলীগের সম্মেলনে কমিটির সভাপতি পদ চাওয়া এক প্রার্থীকে নিয়েও কথা বলেন এমপি।

এমপি ও ওসি তারিকুলের কথোপকথন তুলে ধরা হলো—

এমপি: ওসি সাহেব।

ওসি: জি স্যার আসসালামু আলাইকুম।

এমপি: আপনার পরবর্তীতে দারোগা কি (ওসি পদটি দারোগা নয়, পরিদর্শক) বরগুনায় আসছে?

ওসি: পরবর্তী?

এমপি: আপনি জানেন না, আপনি যখন চলে যাবেন, তখন যে আসবে সে কি আসছে বরগুনায়?

ওসি: স্যার…

এমপি: প্রশ্নটা অনেক কড়া, না?

ওসি: অনেক কঠিন, কড়া স্যার। স্যার, আমি তো আপনাদের রেখে যেতে চাই না।

এমপি: ঠিক আছে। আচ্ছা আপনি কোথাও বলেছেন সাবু (সাহাবুদ্দিন সাবু, জেলা যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী) যুবলীগে আপনার প্রার্থী?

ওসি: না স্যার।

এমপি: এই কথা আপনি কারো সঙ্গে বলছেন?

ওসি: আমার প্রার্থী হয় কীভাবে, আমি কি রাজনীতি করি?

এমপি: আমি কিন্তু বিশ্বাস করি না বলছেন। বলছেন কি না, চিন্তা করেন।

ওসি: না স্যার।

এমপি: মেশেন তো সবার সঙ্গে, কোন গুণ্ডার ধারে বসে কী কইছেন কে জানে।

ওসি: স্যার এটা ফালতু কথা, ফালতু কথা আমি বলতে পারি না।

এমপি: এটা আপনি পারেন না, এসপি সাহেব কইতে পারে?

ওসি: না স্যার সে–ও বলতে পারে না, আপনারা বলতে পারেন।

এমপি: বোঝেন না এলাকায় কত কথাই না হয়।

ওসি: এটা কোনো কথা স্যার? আমরা বলব কেন, এক সময় আমরা ছাত্রলীগ করেছি ঠিক আছে। এখন তো বলার কোনো স্কোপ (সুযোগ) নাই। আজ তো স্যার বিএনপিকেও প্রোগ্রাম করতে দিলাম।

এমপি: তারপর, করবে না কেন? ভদ্র আচরণ করলেই হয়, অভদ্র আচরণ করলেই পিটান। অভদ্র, মারমুখী হইলে তখন আমরা পুলিশকেও জিজ্ঞেস করব না, তখন আমাদের পোলাপান পিটাইবে। বইলা দিয়েন আপনারা (বিএনপি) করলে ভদ্রভাবে কইরেন।

ওসি: জি স্যার, তারা ভদ্রভাবেই করছে।

এমপি: ৬ নম্বরে (বুড়িরচর ইউনিয়ন) ইউনিয়ন ইলেকশনের সময় যে মামলাগুলা হইছিল, সেগুলা কী অবস্থায় আছে?

ওসি: স্যার ওগুলা কি পেন্ডিং আছে।

এমপি: হ্যাঁ, পেন্ডিং আছে না। রিপোর্ট তো দেন নাই এখনো। যাওয়ার আগে ওগুলা গুছাইয়্যা দিয়া যাইয়েন।

ওসি: দিমু স্যার।

এমপি: আবার তাইলে আমরা অ্যাডিশনাল, এএসপি কইর‌্যা নিয়া আসমু।

ওসি: না স্যার দরকার নাই, এই র‌্যাঙ্কেই যেন বাড়ি যাইতে পারি।

এ সময় এমপিকে বলতে শোনা যায়— অনেকে এএসপি হইতে চায় না, ওসিই থাকতে চায়।

কথোপকথনের বিষয়ে কথা বলার জন্য এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে একাধিকবার তার মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

এবিষয়ে বরগুনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কে এম তারিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রেকর্ডটি আমিও শুনেছি, কিন্তু আমার ফোনে তো কোনো রেকর্ড নেই, তাছাড়া আপনারা পেলেন কিভাবে।

তিনি আরও বলেন, ভাই আমার জানি কোনো ক্ষতি হয় না, আমি কিছুতেই বুঝতে পারলাম না আপনারা কি করে এ রেকর্ডটি পেলেন, এ সম্পর্কে আমার কাছে অনেকেই জানতে চেয়েছেন। এটা আমারই কণ্ঠ। গত ২ ডিসেম্বর এমপি স্যারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।

তিনি বলেন, এমন কথা তিনি আমাকে অনেকবারই বলেছেন। তবে এটা কীভাবে ফাঁস হয়েছে সেটা বুঝতে পারছি না।

এ বিষয়ে বরগুনা সদর উপজেলার ৬ নং বুড়িরচর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচনে এমপির ভায়রা সাবেক চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমানের অনুসারীদের হামলার ঘটনায় আমার নেতাকর্মীরা চারটি মামলা করেছিল। সেই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন পুলিশ যাতে আদালতে দাখিল করে, সিদ্দিকুর রহমান সেই চেষ্টা করছিলেন। তাতে কাজ না হওয়ায় এমপিকে দিয়ে ওসিকে বদলির হুমকি দিয়ে এই কাজ করাতে চাইছেন তিনি।

বরগুনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ৬ নং বুড়িরচর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান এমপির ফোনালাপের বিষয় নিয়ে বলেন, তিনি এক পক্ষের মামলা নিষ্পত্তি করতে বলেননি। এটা মিথ্যা ও বানোয়াট কথা।