অনুসন্ধান - অন্বেষন - আবিষ্কার

১ বাঙ্গালী তরুণী এবং তার টিমের হিমালয়া ভ্রমণ এবং ট্রেকিং এর গল্প

0
.

একটি স্বপ্ন পূরণের গল্প
বালিপাস
স্বপ্ন পূরণ বলছি কেন?? হ্যাঁ সেটাই বলবো এখন।।
২০১৮ এর অক্টোবর
প্রথম এই স্বপ্ন টা দেখি ইন্ডিয়ান এক ভাই এর ওআল এ, তিনি এমন কিছু সুন্দর সুন্দর ছবি দিয়েছিলেন , দেখে লোভ ধরে গিয়েছিল আমার। আমি তখন সদ্য সান্দাকফু ট্র্যাক থেকে এসেছিলাম। মানে এক্সপেরিইয়েন্স তেমন নাই বল্লেই চলে। কিন্তু ছবি গুলো যে মারাত্মক!! ফোন গ্যালারীতে সেভ ও করে নিয়েছিলাম।। যা ই হোক, অন্যদিকে আরেকজন ইহা লক্ষ্য ও করছে তা বুঝিনি । হঠাৎ টিকিট করে আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন ।। বললেন এইবার এজেন্সি খোঁজো ট্র্যাক এর জন্য। বেসিক্যালি আমাদের ২ জনের মধ্যে আমি ই এগুলো ঠিক করি , যেমনঃ ট্র্যাক এর রুট প্ল্যান , বাজেট, গাইড ইত্যাদি ইত্যাদি। সো, নেমেপরলাম গাইড খুঁজার কাজে। অনেক গাইড কে নক করেছি টার মধ্যে একজন এর নাম গঙ্গা রানা । অন্যান্য গাইড দের থেকে মোটামুটি কম বাজেট এ তিনি নিয়ে যাবেন বললেন। সব কিছু জিজ্ঞাশা করার সময় এইটাও জিজ্ঞাশা করেছিলাম যে, আমাদের টাইমিং ঠিক আছে তহ? নাহলে পরের বছর আসি, তিনি আমাকে ১০০% ভরসা দিলেন চিন্তা না করার সব ঠিক আছে।। কিন্তু যেয়ে দেখি আবহাওয়া আমাদেরকে অন্য কিছু বলছে 😑 আবহাওয়া বলছে’ তোরা এখন আইসস ক্যান ? ” সো আমরা ফিরে আসলাম (সবার ই এমন টা ই করা উচিত) । আমাদের ২ জনের সাথে চট্টগ্রাম এর একজন যোগ হয়েছিলেন ট্র্যাক আ।।উনি ভাবলেন , টাকা তহ পুরটা দিয়েছি (৭ দিনের উদ্দেশে) গেলো মাত্র ৪ দিন সো রাস্তার মাঝে ২ দিনের একটা ট্র্যাক আছে ওইটা করি ।। আমরা ২ জন ও রাজি হলাম, ঠিক তখন থেকেই আমাদের গাইড দের মেজাজ খারাপ আমাদের উপর । তারা চাইছেন আমরা যেন এই ৪ দিন করেই ফিরে যাই।। আমি আবার মানুষ এর গোমড়া মুখ দেখতে পারিনা।। তাই আমরা ২ জন ফিরে আসলাম , আমাদের সাথের জন রয়ে গেলেন । উনি ট্র্যাক করে আসার শেষ দিন নাকি ঐ গাইড রা ওনাকে খাবার ই দেয়নি , একটা হোটেল এর সামনে রেখে চলে গেসে, যেখানে শেষ দিন পর্যন্ত থাকা খাওয়া অনাদের ছিল।। যা ই হোক, খুব বাজে অভিজ্ঞতা ছিল সেইবার। টার মধ্যে , কোমর সমান লুজ বরফ এ হাঁটা, বরফ এর উপরে ম্যাট করে ঘুমানো , হেভি স্নফল এ হাঁটা এগুলো কিছু নতুন এক্সপেরিএন্স হয়েছিল।। কথায় আছে যেখানেই ঠেকেছ সেখানেই শিখেছ ।। কিন্তু পেইন গুলো হাওয়া হয়ে গিয়েছিল যখন ছবি গুলো দেখেছি😍।

সো ২০১৯ এ ভাবলাম আবার যাবো ।।
অবশ্যই পাস কমপ্লিট হয়নি তার একটা পেইন তহ ছিল ই কিন্তু মন এ শুধু একটা জিনিস ই ঘুরছিল,” বাজে আবহাওয়া তেই এমন ছবি, তাহলে ভালো আবহাওয়া তে না জানি কি ছবি উঠবো” এবং হ্যাঁ আমি স্বভাবত ই ঘাউরা .
কিন্তু মাথায় এইটাও আছে যে, ভুলেও গঙ্গা রানা বা তার জাতি গুষ্ঠি কারো সাথে যাবনা।। ঠিক তখন ই এক ইন্ডিয়ান বড়ভাই কমল ঠাকুর এর কথা বললেন ।। আমি এক কথায় ওনার সাথে যোগাযোগ করতে রাজি হই , কারন টা হল” গঙ্গা রানা এজেন্সি চালায় কিন্তু কমল দাদা লোকাল গাইড” । আমিও সবসময় লোকাল মানুষ খুঁজি ট্র্যাক এ যাওয়ার ক্ষেত্রে ।। ওনার বাজেট আরও কম।। 🙂

কিন্তু যেহেতু বলেছি স্বপ্ন পূরণ তার মানে স্বপ্নে বাধা বিঘ্ন তহ আসবেই ।। হ্যাঁ তা ই হয়েছে।। প্ল্যান করেছি সেপ্টেম্বর এর শেষ এ যাবো, সব টিকিট ও করা। কিন্তু তার ১ মাস আগে লাদাখ এ একটা এক্সপিডিশন এ গিয়েছিলাম। বডি অলরেডি খারাপ , জাস্ট রিকভার ই হচ্ছিলো কি বালিপাস এ যাওয়ার সময় চলে আসলো । একটা সময় তহ ভাবছিলাম টিকেট কেন্সেল করে দিব, পরের বছর যাবো । কিন্তু নাহ, আগেই বলেছি ” আমি স্বভাবত ই ঘাউরা 😑 ”

যাওয়ার আগের দিন ও সিউর ছিলাম্না যে যাবো নাকি।। এদিকে আবার আবহাওার ফরকাস্ত এ দেখলাম নেক্সট ১ সপ্তাহ অনেক বৃষ্টি থাকবে , ধুর!! রাত এ ওকে বললাম চলো যাই, যা আছে কপালে ! পরের দিন সকাল এর ফ্লাইট এ কলকাতা নেমেই ঝুম বৃষ্টি ।। আমি একটুও অবাক হইনি।। হাওড়া থেকে ট্রেন ছাড়ল রাত ১০ টায় ট্রেন এ থাকতে হবে ৩৬ ঘণ্টা , আল্লাহর রহমতে এই ৩৬ ঘণ্টার ৩৮ ঘণ্টা ই বৃষ্টি দেখসি জানালা দিয়ে ।। কারন বৃষ্টির কারন এ ট্রেন ৪ ঘণ্টা লেইট 🙁 । মন টা হঠাৎ চাঙা হয়ে গেলো হরিদ্দার এ এসে, যখন দেখি বৃষ্টি নাই ☺️ ।দেহ্রাদুন এ এসে রুম নিয়ে বিশ্রাম ই নিচ্ছিলাম কি বিকাল এ আবার বৃষ্টি শুরু 😑 ।
কি আর করা!!
ট্রেক আর প্রথম ৩ দিন বৃষ্টি নিয়েই হাঁটা 🤔 আর ৪রথ দিন থেকে বাজে স্নফল ।। আবহাওয়া টা এমন ছিল যে, সকাল সকাল ভালো কিন্তু ১১ তা/১২ টা বেজে গেলেই খারাপ।
যা ই হোক অক্টোবর এর ৩ তারিখ অনেক জল্পনা কল্পনা শেষ করে বালি বেস ক্যাম্প এ পৌঁছুই । এবং প্ল্যান হল ৪ তারিখ খুব ভোরে পাস কমপ্লিট করে নেমে যাবো। আর বেস ক্যাম্প এমন একটা জায়গা, এখান পর্যন্ত চলে আসলে যেভাবেই হোক পাস করে চলে গেলে ১ দিন হাঁটলে ই ভালো যায়গায় চলে যাওয়া জায়।ভাল জায়গা এইজন্য ই বলছি কারন ভালো খাবার পাওয়ার যায়গায় যাওয়া যায় , কারন আমি ট্র্যাক এর ২য় দিন থেকে না খাওয়া 🥴 । আর যদি বেস ক্যাম্প পর্যন্ত এসে ফিরতি রাস্তায় চলে যেতে হয় তাহলে ৩ দিন এর হাঁটা 🤨 ।। সো প্ল্যান করলাম , জেভাবে ই হোক পাস করে যাওয়া ভালো।।
সো ৪ অক্টোবর সকাল
ঘুম থেকে উঠে বাইরে তাকালাম, কিসসু দেখিনা 😕 white out একদম ।। যেটার ভয় পাচ্ছিলাম সেটা না যেন হয়, আর আমাদের গাইড সকাল ৮ টায় এসে সেটাই বললেন।। হয়তো আমাদের ফিরতি রোড এ ই যেতে হবে। কারন উপরে কেন, ২ হাত পরে ই কি টা ই দেখা যাচ্ছেনা। এমন অবস্থায় গেলে যেকোনো বিপদ হতে পারে কারন পাস করা টা কষ্ট নয়, পাস করে নিচে নামা টা মেইন সমস্যা ।। পুরো খাড়া রাস্তা। তার উপরে নতুন নরম স্নো ।
বেস ক্যাম্প এ তখন আরও একটা টিম আছে, ওনারা ও ভাবছেন , যাবেন কি যাবেনা ।। তারা ৩০ জনের টিম ছিল , হতো ১২ জন ছিল ত্রেকার বাকি সবার গাইড এবং পোটার ।। আর আমাদের টিম এ ৬ জন ত্রেকার আর ৪ জন গাইড পোটার ।। সবাই মিলে প্ল্যান চলছে……
দুপুর ১২ টার দিকে আমাদের গাইড বললেন, যদি পাস করতে হয় তাহলে ১০ মিনিট এ রেডি হয়ে যান , হাল্কা হাল্কা ভালো হচ্ছে আবহাওয়া।। আমরা ১২.১৫ এর মধ্যে সব প্যাক করে হাঁটা শুরু।। ৩০ মিনিট হাঁটতে না হাঁটতে ই আবার স্নফল শুরু।। আমার হইসে জ্বালা ।। কানা আমি (-4.75 ) গ্লাস বার বার ঘোলা হয়ে যাচ্ছে , গ্লাস খুললে কিসসু দেখিনা আর গ্লাস পড়লে আরও দেখিনা 😔 । এমন স্নফল যে মনে হচ্ছে, কেও আমার গালে কষে কষে থাপ্পড় দিয়ে ই যাচ্ছে –(আরেহ এগুলা কিসুনা) 🐸
কথায় আছে, দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ।। কথার যথার্থতা এই ট্র্যাক এ পেয়েছি।। তাদের টিমের গাইড রা ও অনেক সিনিয়র ছিলেন।। তারা অন্য টিম হয়ে এতো হেল্প করবে আশা ই করিনি।।
সব কিছু উপেক্ষা করে দুপুর ২ টা ৩৪ এ আমরা পাস এর সামিট পয়েন্ট এ পৌছুলাম 😇 (৪৯৫০মিটার )।
অনেক গুলো পজেটিভ মানুষ পেয়েছি এইবার।।

অনেক কিছু শিখেছিলাম ২০১৮ তে ট্র্যাক এ গিয়েঃ ১ঃ হিমালয় এ অবশ্যই হিমালয় এর সময় অনুযায়ী যেতে হবে, নিজের সময় মত নয়। ২ঃ নিজের বডি কন্ডিশন অনুযায়ী শীত নিবারন এর কাপর দিতে হবে, কিছু টাকা বাঁচাতে যেয়ে নিজের ক্ষতি না হয়ে যায়। ৩ঃ আবহাওয়ার উপরে কারো হাত নেই, ভালো রোদেলা দিনেও হঠা ৎ করে আবহাওয়া খারাপ হতে পারে, সো সব সময় পজেটিভ থাকতে হবে এই ব্যাপার এ। ৪ঃ লোকাল দের উপদেশ শুনা উচিত।। অবশ্যই আমরা বুঝি, কে ভালোর জন্য বলছে , কে খারাপ এর জন্য বলছে ।
.
বালি পাস ট্র্যাক টাইমঃ জুন-জুলাই সেপ্টেম্বর মিড থেকে অক্টোবর মিড Altitude: 4950m Maximum temp: 5 to – 15/20 Trek starting point : TLUKA Trek finish point: Jankichatti
আমাদের রুট প্ল্যান ছিলঃ Day1: dehradun to shankri to taluka
Day2: Taluka to seema
Day3: seema to ruinbasara theke 3km এগিয়ে
Day4: ruinbasara to upper thanga
Day5: Upper thanga to basecamp
Day 6: Basecamp to summit pass then opposite base camp
Day7: opposite base camp to Barkot
Day8: Barkot to mossuri stay